১. একটি শিশুর বড়ো হয়ে উঠা কী আনন্দের তাই না? কিন্তু একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ, যিনি তাঁর যৌবন আমাদের জন্য উৎসর্গ করেছেন, তিনি যখন বয়সের কারণে ধীরে ধীরে শিশু হয়ে যান তা কী ভয়ংকর কষ্টের!
২. একটি শিশু যখন টলটলে পায়ে হাঁটতে শেখে তখন আঙুলে তার ছোট্ট হাত ধরে হাঁটতে পারাটা বেহেশতের সুখ এনে দেয়, আর একজন বয়স্ক মানুষ যখন জরার কারণে হাঁটতে পারেন না, তাঁকে ধরে ধরে হাঁটতে সাহায্য করতে হয় তখন বারবার চোখ ভিজে আসে।
৩. শিশু যখন অস্পষ্ট শব্দে ‘বা বা বা বা ‘ কিংবা ‘মা আ আ আ’ ডাকে আনন্দে আমাদের চোখে জল আসে, আর বয়সের কারণে স্বর হারানো মানুষটি ক্ষীণ কণ্ঠে যখন ‘বা আ আ’ করেন তখন কষ্টে নিজের হাত নিজের কামড়াতে ইচ্ছে করে।
৪. শিশুটি খেতে চায় না, মা গান শুনাতে শুনাতে তাকে খাওয়াচ্ছেন, শুধু এ দৃশ্যের বিনিময়ে অনেকেই ‘সমরখন্দ’ বিলিয়ে দেবেন, আর বাড়ির বার্ধক্য আক্রান্ত মানুষটিকে যখন এভাবে খাওয়াতে হয়, তাঁর মুখ থেকে ঝরে পড়ে ভাতের নলা, তখন মনে হয় সমরখন্দ নয়, পুরো পারস্য বিলিয়ে দেব, শুধু এ মানুষটির নরম ভাত চিবানোর ক্ষমতা ফিরে আসুক।
৫. শিশুটি এখনো বসতে শিখেনি, বিছানায় কলকল করে। আমরা পাশে দাঁড়িয়ে বিস্ফোরিত আনন্দ নিয়ে তা দেখি, আর যৌবনহারা বয়স্ক মানুষটি যখন বিছানাবন্দি থাকেন, ‘অ অ অ’ করে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করেন তখন বুকের ভেতর কেমন আগুন জ্বলে তাই না? এ আগুনের রঙ নীল- কারণ বেদনার আগুন কখনো হলুদ হয় না।
৬. শিশুটিকে যখন সবাই দেখতে আসেন তখন তাঁদের চোখে থাকে স্বাগতমের ভাষা, বয়স্ক শিশুটিকে দেখতে এলে তাঁদের চোখে খেলা করে বিষণ্ণ বিদায়ের ভাষা। এটা দেখলে আমার দুনিয়া ফাঁকা হয়ে যায়, আমি দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে থাকি, কারণ আমি মাথা ঘুরে পড়ে যেতে পারি।
আহা! আমাদের সব বয়স্ক শিশুরা ভালো থাকুন।
আমাদের আয়ু আর যৌবন ধার করে তাঁরা সুস্থ থাকুন।
আসুনমায়াছড়াই।
(পোস্টটি শেয়ার করা যাবে।)