ইফ উই ফল, উই উইল ফল ফরোয়ার্ড। (‘মার্চ ফরোয়ার্ড’ এর উদ্বোধনী বক্তৃতা।)

১। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশের সবচে বড়ো সম্পদ হলো তারুণ্য। স্টিভ জবসের কথায় ত্রিশের নিচে যারা তারাই পৃথিবী পাল্টাবে। আমি আজ যারা এ দুনিয়া পাল্টাবে তাদের সামনে এসেছি, হাতে হাতে ধরে সামনে এগুনোর জন্য। এজন্যই আমাদের কর্মসূচির নাম ‘মার্চ ফরোয়ার্ড।‘ আমরা সামনে এগুবো, সাথে থাকবে দুনিয়ার সবচে স্মার্ট প্রজন্ম। আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি ইউটিউব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, গুগল এর শীর্ষ পদগুলো চালাতে পারে, ‘পাঠাও’ এর মতো স্টার্ট আপ তৈরি করতে পারে, তাঁরা সব কিছুই ওলটপালট করে দিতে পারে। এ বিশ্বাস আমার আছে।

২। তারুণ্য হচ্ছে সবচে বড়ো শক্তি। ১৯৯৯ সালে আলীবাবা যখন মাত্র যাত্রা শুরু করেছে, যখন এটি ছোট্ট একটি কোম্পানি তখন পৃথিবীর অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান ইয়াহুর অন্যতম একজন প্রতিষ্ঠাতা এতে চীফ টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন। তখন আলী বাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি এত বড়ো কোম্পানি ছেড়ে আমাদের মতো ছোটো কোম্পানিতে কেন জয়েন করলেন? ভদ্রলোকের উত্তর ছিল, কারণ তোমরা তরুণ। যদি এমন কি এক বছরের তারুণ্যও কিনতে পাওয়া যেতো, আমি মিলিয়ন ডলার খরচ করতাম। আমি সেই বিলিয়ন ডলার তারুণ্যকে সাথে নিয়ে সবকিছু বদলে দিতে চাই।

৩। আমাদের এ প্রকল্প পুরোটাই চ্যারেটি মিশন। আমার সাথে যারা কাজ করছেন, তাঁরা এ প্রত্যয় নিয়ে কাজটি করছেন। কিন্তু কখনো যদি এমন কি বাণিজ্যিক মনোভাবের ছায়া এতে দেখা যায়, সাথে সাথে এটা বন্ধ করে দেওয়া হবে। টোটাল শাট ডাউন। আমরা গড়তে যেমন জানি, মুহূর্তে তা ধ্বংসও করে দিতে জানি, যদি তা মানুষের কাজে না লাগে। উই আর হিয়ার টু গিভ, নট টু টেইক। শুধু তরুণদের আত্মমর্যাদা রক্ষার জন্য কেবল যারা চাইবেন, তাঁদের কাছ থেকে মাসে নামমাত্র ১০০ টাকা নেয়া হবে। যারা দিতে পারবেন না, তাঁদের কোনো টাকা দিতে হবে না। তবে নামমাত্র মূল্য যারা দেবেন তাঁদের সামান্য কিছু বেশি ফ্যাসিলিটি দেওয়া হবে, যার খরচ তাঁদের দেওয়া ১০০ টাকায় নির্বাহ করা হবে, তাই এ সেবা তাঁরা প্রাপ্য।

৪। আমরা এখন তৃতীয় শিল্প বিপ্লব পার করছি। প্রথম শিল্প বিপ্লব মানুষকে শারিরীক পরিশ্রম থেকে মুক্তি দিয়েছে, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব মানুষকে দূরত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছে। তৃতীয় বিপ্লবটি আমাদের মুক্তি দিচ্ছে মস্তিষ্ককে অযথা মাথা ঘামানো থেকে । অনেক কাজ এখন মেশিন করছে, আমাদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। এ সুযোগ আমাদের নিতে হবে। মগজের যে জায়গাগুলো খালি পড়ে আছে তা নতুন চিন্তায় শাণিত করে আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে হবে, এজন্য দরকার ক্রেইজি পিপল।প্লিজ বি ক্রেইজি অর লিভ আস।

৫। অনেকেই মনে করেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে মানুষের কাজ কেড়ে নেবে। আমি মনে করি মানুষের প্রকৃত কাজ সৃষ্টি। তা মেশিন কেড়ে নিতে পারবে না। কারণ মানুষই মেশিন তৈরি করবে, মেশিন মানুষ তৈরি করবে না। মানুষের হৃদয় আছে, মেশিনের আছে চিপস। চিপসের কাছে হৃদয় হারতে পারে না। শুধু আমাদের কাজ হবে লেগে থাকা। এ লেগে থাকার জন্যই আমাদের এ প্রকল্প। তবে যদি দিনে মিনিমাম তিন ঘণ্টা সময় দিতে না পারেন, তবে আমাদের সাথে না থাকাই ভালো।

৬। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সব কিছু কেড়ে নেওয়া যেতে পারে, কিন্তু মগজ কেড়ে নিতে পারে না। আমরা আপনাদের মধ্যে সে মগজ তৈরি করতে চাই, যা হবে আপনার সেরা সম্বল। দয়া করে সাথে থাকুন।

৭। আমরা মনে করি, জ্ঞান ভাগ করা আমাদের দায়িত্ব, এটা মাথায় বন্দি করে কবরে নিয়ে যাওয়া অপরাধ, তাই আমরা দেশের সেরা মানুষদের জড়ো করেছি আপনাদের সাথে জ্ঞান ভাগ করার জন্য।

৮। একই সাথে স্পষ্ট করে বলি, আমরা আপনাকে তথাকথিত সফল মানুষ বানাতে চাই না। আমরা চাই সফল ভালো মানুষ বানাতে। আবার বলছি, সফল ভালো মানুষ। মনে রাখবেন, ছোটো বেলায় আমাদের মা-বোনেরা সূচিকর্ম করে লিখতেন “পাখিরা উড়ে যায়, রেখে যায় ছায়ামানুষ চলে যায় রেখে যায় মায়া।“এরচে বড়ো দর্শন আমি আর খুঁজে পাইনি। মায়াই যদি রেখে যেতে না পারি আমাদের জীবন বৃথা।

৯। আমাদের কাছে কোর্স করে কেউ যদি মনে করেন ঠকছেন, আমাদের বলবেন, আর ভালো লাগলে বন্ধুদের বলবেন। আমরা একটি বিপ্লব করতে যাচ্ছি। নৈতিকতার বিপ্লব, সার্থকতার বিপ্লব। হাতে হাত রাখুন, কথা দিচ্ছি, দরোজার ওপারে যে আলো ঝলমলে দুনিয়া আছে তা আপনাদের আমরা দেখাবো।

১০ সব শেষে বলি, আমরা যদি আছাড়ও খাই, সামনের দিকে পড়বো, পেছন দিকে নয়। ইফ উই ফল, উই উইল ফল ফরোয়ার্ড, নট ব্যাকওয়ার্ড।

#আসুনমায়াছড়াই