বছর দু’য়েক আগে কথাগুলো বলেছিলাম।
কাঙালের কথা কেউ শুনেনি, ভবিষ্যতেও শুনবে না। কিন্তু যা বলেছিলাম তাই ঘটছে। করোনায় আর্থিক অন্ধকারে সবাই তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
বলি তাহলে আবার কথাগুলো …
ভদ্রলোক মেয়ের বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছিলেন।
বিনয়ের সাথে বললাম, ভাইসাহেব, আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো, আপনি নিজে এসেছেন এ সামান্য মানুষকে দাওয়াত দিতে। কিন্তু মাফ করবেন, আমি একটি প্রশ্ন করবো।
“জী, অবশ্যই ভাইজান, করেন।”
“আপনি তো কয়েকটি অনুষ্ঠান করছেন। হাজার খানেক লোক দাওয়াত দিয়েছেন তাই না?”
“জী, ভাইজান।”
“আমার ধারণা আপনার লাখ বিশেক টাকা খরচ হবে তাই না? মাফ করবেন খুব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে ফেললাম।”
“না, না,ভাইজান, আপনি আমার আপন লোক …”
“জী, আপন মানুষ হিসেবেই বিনয়ের সাথে বলি, অযথা এ টাকা খরচ না করে তা যদি মেয়ের নামে সঞ্চয়পত্র বা এফডিআর করতেন, পাঁচ-ছয় বছরে দ্বিগুন হতো, মানে চল্লিশ লাখ হতো। তারপর তারা আবার তা রিইনভেস্ট করলে দশ-বারো বছরে হতো আশি লাখ। আরো পাঁচ-ছ’ বছরে হতো এক কোটি ষাট লাখ। মানে বিশ বছর পর তা তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতো।
আর ওই সময়টায় তাদের এ টাকা কত কাজে লাগতো তাইনা?
থাকার একটা জায়গা কিনতে পারতো, ছেলেমেয়েকে ভালো জায়গায় পড়াতে পারতো, বিপদ আপদ সামলাতে পারতো।
তাদের ভবিষ্যত কত নিরাপদ হতো। ঠিক না ভাইজান?
তাছাড়া, সব সময় তো এক যায় না ভাই। টাকাটা মেয়ের হাতে থাকলে দুঃসময়ে কাজে লাগতো। আবার যদি পুরো বিশ লাখ টাকা ওকে না দিয়ে নিজের জন্য অর্ধেক রেখে দেন, তাহলে বিপদে আপনারও আসান হতো। বয়স হচ্ছে, চিকিৎসা আছে, আর কতো কিছু ঘটতে পারে, তাই না?
আবার এ ব্যাপারটা অন্য একটি মেয়ের বাবার জন্য কত দুর্বিষহ হয়ে উঠছে একবার ভাবুন। আপনার অবস্থা ভালো, তাই আপনি খরচ করে একটি ‘ট্রেন্ড’ তৈরি করছেন। তা চাপে ফেলছে যাদের টাকা নেই তাঁদের। ধার করে তাঁদেরও এসব ফালতু খরচ করতে হয়। কতো মধ্যবিত্ত বাবার চোখের জল রক্তের ফোঁটায় পরিণত হচ্ছে। কত অসহায় মেয়ের তীব্র অপমান আসমান জমিন কাঁপাচ্ছে।
ভদ্রলোক আমতা আমতা করতে লাগলেন, “জি, জি কিন্তু …”
আমি বললাম, “আপনি কিন্তু আপনার মেয়ের এবং নিজের নিরাপত্তা হাজার মানুষের মুখে ‘খাবার’ হিসেবে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। কাজটা কি উচিত হচ্ছে ? নিজেদের ভবিষ্যতকে ‘পোলাউ-কোরমা’ বানিয়ে খেয়ে ফেলা কি ঠিক? আপনার রাজকন্যার ভবিষ্যৎ তো আমজনতা চিবানোর জন্য নয়, ভাই সাহেব।”
এখন আমি গভীর বেদনা নিয়ে দেখছি এদের অনেকেই এখন গভীর সমুদ্রে। ব্যবসা বন্ধ, জমাজাতি নেই। মাথায় বজ্রাঘাত!
বাজ পড়ারই কথা। কারণ পিপীলিকার শীতের সঞ্চয়ের কবিতা আমরা সবাই পড়েছি, কিন্তু মনে রাখিনি।
পরম করুণাময় সবাইকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করুন।