ক্ষরণ

সম্রাট আকবর হযরত শেখ সেলিম চিশতীর সামনে বসে আছেন। তিনি ঘামছেন, বেশ নার্ভাস লাগছে। হযরত নামাজ পড়ছেন। মুনাজাত শেষ করে তিনি আকবরের দিকে ফিরে প্রশ্ন করেন, বলুন সম্রাট, আপনি কেন এসেছেন?
মুঘল সম্রাট উত্তর দিলেন, আপনি কি বলতে পারেন, আমার স্ত্রী কি কখনো পুত্র সন্তান প্রসব করবেন?”
হযরত সেলিম চিশতি মৃদু হেসে বললেন, এটা তো খুব সহজ প্রশ্ন সম্রাট।
আকবরের মধ্যে রাজন্যভাব ফিরে এসেছে। তিনি বললেন, না, এটি সহজ প্রশ্ন নয়। আপনি কি জানেন সম্রাজ্ঞী একজন হিন্দু এবং বিয়ের পরও তিনি ধর্ম ত্যাগ করেননি। প্রাসাদে তাঁর মন্দির আছে।
হজরত সেলিমের মুখে স্মিত হাসি, তিনি বললেন, সারা হিন্দুস্তান ব্যাপারটা জানে সম্রাট।
আকবর এবার সামনে ঝুঁকে প্রশ্ন করলেন, আমার পুত্র সন্তান না হওয়াটা কি হিন্দু বিয়ের কারণে মহান আল্লাহতালার শাস্তি? রাজদরবারের উলেমারা এ মত দিয়েছেন।
হজরত সেলিম তজবিহ গুনছেন, তিনি উত্তর দিলেন, না , একজন অধম বান্দা হিসেবে আমি বিশ্বাস করি আল্লাহকে পাওয়ার অনেক রাস্তা আছে। যে যেভাবে পছন্দ করে সেভাবেই তাকে স্মরণ করতে পারে।
আকবর কিছুটা অসহিষ্ণু কন্ঠে বললেন, আপনার বিশ্বাস নয়, আপনি বলুন আমাদের ধর্ম কী বলে?
হযরত উত্তর দিলেন, ‘আমাদের ধর্ম সব বিশ্বাসকে সম্মান করতে বলে। মহান আল্লাহ সবার। তিনি সীমিত নন এবং দিল্লীর মালিক আকবর, আপনি একটি নন তিনটি পুত্র সন্তানের জনক হবেন।’

আমি জানি পবিত্র গীতাও একই কথা বলে।
গীতার একাদশ অধ্যায়ের চতুর্থ শ্লোকে ঈশ্বর ঘোষণা দিয়েছেন, “যে মানুষ আমাকে যে ভাবে ভজনা করে, আমি তাকে সেই ভাবেই কৃপা করি । সকল মানুষ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে এক আমারই পথ অনুসরণ করে চলেছে।”
আমি আমার বুক সেলফে রাখা গান্ধীজীর ভাষ্কর্যের দিকে তাকিয়ে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারির কথা ভাবছি। সেদিন বিকেলে পাকিস্তানের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার দাবিতে আমরণ অনশনরত মানুষটি ভক্তদের সাথে দেখা করতে এসেছেন।হাঁটতে হাঁটতে তিনি আবৃত্তি করছেন,
“রঘুপতি রাঘব রাজা রাম
পতিত পাবন সীতা-রাম
ঈশ্বর আল্লাহ তেরো নাম
সবকো সম্মতি দে ভগবান।”
সে অবস্থাতেই তাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
আবার মহাত্মার মূর্তির দিকে তাকালাম। তিনি কি কাঁদছেন?
মনে হচ্ছে কাঁদছেন, মাটির মূর্তিতে জলের দাগ।

পাদটিকা-১. আমি আর কিছুই বলবো না। শুধু বলবো আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে৷
২.কমেন্টে আমি কোন বিদ্বেষ, উস্কানি চাই না। মায়ার কথা শুনতে চাই। রাজনৈতিক প্রসঙ্গ তো নয়ই।
#আসুনমায়াছড়াই