১৯৯৮ সাল।
টাটা গ্রুপের বোর্ড রুমে যেন বোমা ফাটলো।
কারণ এইমাত্র চেয়ারম্যান রতন টাটা অ্যাজেন্ডার খানিকটা বাইরে গিয়ে ঘোষণা করলেন, ট্রাক ছাড়াও তিনি চান টাটা প্রাইভেট কার বানাক।
বোর্ডের কয়েকজন ইতস্তত করতে লাগলেন।
রতন টাটা নিজেই নিস্তব্ধতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলেন, ‘অ্যানি কমেন্ট জেন্টেলম্যান?’
টাটা মটরসের সিইও গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন, ‘স্যার, আমাদের তো সে প্রস্তুতি নেই।’
রতনজী মৃদু কন্ঠে বললেন, মি. সিইও আজ যে বিশাল ভবনের টপ ফ্লোরের কনফারেন্স রুমে আপনি বসে আছেন, সেটাও এক সময় কেবল ধুলোবালি ছিল অ্যান্ড উই হ্যাভ বিল্ট ইট ফ্রম ডাস্ট।
১৯৯৮ সালেই ‘টাটা ইন্ডিকা’ বাজারে নামলো।
দেখা গেলো এবার ধুলো সোনা হয়নি। ইন্ডিকার দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না৷ গোত্তা খাঁওয়া ঘুড়ির মতো তা মাটিতে পড়ে আছে।
১৯৯৯ সাল।
রতন টাটা আমেরিকার বিখ্যাত ফোর্ড কোম্পানি থেকে ইন্ডিকা প্রজেক্ট কেনার প্রস্তাব পেলেন।
কী আর করা! নিজের স্বপ্নকে কবর দেওয়ার অনুভুতি নিয়ে তিনি দলবলসহ উড়াল দিলেন ডেট্রয়েটের উদ্দেশ্যে। সেখানেই ফোর্ড কোম্পানির হেড অফিস।
তিন ঘন্টা আলোচনার পর ফোর্ডের চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড খুব রুক্ষভাবে রতন টাটাকে সবার সামনে বললেন, ‘তোমাদের গাড়ি নামের ওই অদ্ভুত বস্তুটি আমরা কিনতে চাচ্ছি, এটাই কি যথেষ্ট নয়? আবার দরদাম কিসের?’
রতন টাটার টকটকে ফর্সা মুখে অপমানের ছোপছোপ দাগ, তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং ঠান্ডা গলায় বললেন, দা ডিল ইজ কিল্ড মিস্টার চেয়ারম্যান, ইন্ডিকা আমরা বিক্রি করবো না।
২০০৮ সাল।
টাটা ইন্ডিকা এবার ধুলো থেকে সোনা হয়েছে।
ভারতের বিশাল বাজার দখল করে তা বাইরের বাজারেও গর্বিত লাল মোরগের ঝুঁটি উঁচিয়ে রাস্তায় ছুটছে আর আটলান্টিকের অপর পারে তখন ফোর্ড মোটর একটার পর একটা মার খেয়ে মাটিতে হামাগুড়ি দিচ্ছে। যেকোনো সময় দেউলিয়া ঘোষণার অপেক্ষা মাত্র। ঠিক তখন রতন টাটা ফোর্ডের সবচে দামি দুটো ব্রান্ড জাগুয়ার আর ল্যান্ড রোভার মডেল কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেন।
এবার যাত্রা হলো উল্টো দিকে। টাটারা আমেরিকা গেলেন না, ফোর্ডরা আসলেন ভারতে।
আলোচনার কয়েক মিনিটের মাথায় রতন টাটা মাইক্রোফোন নিজের দিকে টেনে নিয়ে শুধু একটি বাক্য উচ্চারণ করলেন, ‘ডান, জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার আমরা কিনে নিলাম।’
ফোর্ডের বদরাগি চেয়ারম্যান বিল ফোর্ড নম্র কণ্ঠে উত্তর দিলেন, ইটস আ ফেভার মিস্টার টাটা, ইউ সেইভ আস।’
দীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস ফেলে রতন টাটার ইচ্ছে হলো মাত্র নয় বছর আগের বিলের রুক্ষ চেহারার কথা মনে করিয়ে দিতে, তারপরই তিনি ভাবলেন করে দেখানোর চেয়ে বড়ো প্রতিশোধ আসলে আর কিছু নেই এবং তা করা হয়ে গেছে।
রিভেঞ্জ ইজ ডুয়িং।
তিনি মৃদু হেসে বললেন, ইউ আর ওয়েলকাম মিস্টার বিল।
(পাদটীকা: টাটা গাড়ি আমাদের দেশে তেমন জনপ্রিয় নয়, কিন্তু ভারতের নিজস্ব বাজারই একে সোনায় মুড়ানোর জন্য যথেষ্ট, তবে জাগুয়ার আর ল্যান্ড রোভার কিন্তু পুরোটাই আমেরিকান স্টান্ডার্ড এবং এর বিশ্বব্যাপী সাফল্য টাটার ব্যাংকে বিলিয়ন ডলার লাভ এনে দিয়েছে। সবচে বড়ো কথা এ পোস্টের উদ্দেশ্য গাড়ির মান নয়, এর বার্তা হলো ‘জেদ’ )