বাচ্চা মানুষ করা

অনেকদিন পর ভদ্রলোকের সাথে দেখা।
তাঁকে আমি খুব পছন্দ করতাম, কারণ এত স্বজ্জন লোক খুব কম হয়। আরেকটি কারণ হলো তাঁর দুছেলেই ছিল কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্র। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে তাঁর বাচ্চাদের কথা শুনতাম
সময় পেরিয়ে গেছে প্রায় এক যুগ, তিনি অনেক আগেই সত্তর পেরিয়েছেন; কিন্তু শরীরের টানটান ভাব অটুট, বরং চেহারায় এক ধরনের নতুন আভা, যা আগে দেখিনি।
জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা,আপনার ছেলেরা কী করছে?
তিনি হাতজোড় করে উপরে তুললেন তারপর বললেন, ‘তাঁর কৃপায় বড়োটি বুয়েট থেকে বের হয়ে এমআইটি থেকে পিএইচডি করে কানাডায় একটি কোম্পানি রিসার্চ হেড, ছোটোটিও বছর খানেক আগে বুয়েট থেকে কয়েক বছরের মধ্যে রেকর্ড মার্ক নিয়ে ফার্স্ট হয়ে সেখানেই জয়েন করেছিল, এখন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে।’
শুনে আমার খুব ভালো লাগলো। জিজ্ঞেস করলাম,আপনি কেমন আছেন?
‘খুব ভালো, বছরের বড়ো একটি সময় ওদের সাথে কাটাই, বাকি সময় দেশে সে আগের কোম্পানিতেই চাকুরি করি। মালিক আমাকে ছাড়েননি। সুখে আছি স্যার।’
কিছুটা লজ্জা ভেঙে বললাম,আচ্ছা, এই যে আপনার বাচ্চারা এত ভালো করছে এর সিক্রেট কী?
‘কোনো সিক্রেট নেই তবে কিছু উপদেশ আছে। আগ্রহী হলে বলতে পারি।’
‘অবশ্যই বলুন।’
১. খান বা না খান বাচ্চাদের সেরা শিক্ষকের কাছে পড়াবেন।
২. তাদের শরীর ঠিক রাখার সব ব্যবস্থা নেবেন। সামান্য অসুস্থ হলেও সেরা ডাক্তারের কাছে নেবেন।
৩. সব সময় উপরওয়ালাকে বলবেন, ‘হে করুণাময়, আমি আমার সন্তানের জন্য খ্যাতি চাই না, বিত্ত চাই না, শুধু চাই আয়ু আর মানুষের সেবা করার ক্ষমতা।’ এ দুটো পেলে তাদের আর কিছু লাগবে না।
৪. ক্ষুধার্তকে খাওয়াবেন৷ তাঁর অনাহারী চোখের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ‘আহা! আমার সন্তান যাতে থাকে দুধেভাতে।’ খোদা তাদের দুধভাতের ব্যবস্থা করবেন।
৫. বাচ্চাদের সামনে ঝগড়া করবেন না।
৬. প্রয়োজনে কঠোর হবেন। একটা বয়স পর্যন্ত তারা আপনার আইনে চলবে, তাদের নিজের আইনে নয়।
৭. পকেটে ভাংতি টাকা রাখবেন, কেউ হাত পাতলে ফেরত দেবেন না, এ দান উপরওয়ালা আপনার বাচ্চাদের ফেরত দেবেন।
৮. বাচ্চাদের জন্য একটি উপদেশই যথেষ্ট, তাহলো, ‘তুমি মানুষ, পশু নও, তাই তোমাকে মানুষের আচরণ করতে হবে, পশুর নয়।’
৯. ছেলেকে বলবেন, কোনো অসহায় মেয়ের অভিশাপ যেভাবে আরশ কাঁপায় তা আর কিছু কাঁপায় না।
১০. স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেবেন, কারণ আসলে বাচ্চারা মানুষ হয় মায়ের হাতে, বাবারা তেমন সময় দিতে পারেন না।
‘বাচ্চা মানুষ করার জন্য এগুলোই যথেষ্ট,আর কিছু লাগবে না।’
ভদ্রলোক হাসছেন, তাতে এক ধরনের আলো, আমি সে আলোয় ডুবে যাচ্ছি।

আসুনমায়াছড়াই।

(লেখাটি শেয়ার করা যাবে)