নভেম্বর মাস।এবার বেশ শীত পড়েছে। বিশেষ করে কালুরঘাট ব্রীজ পার হওয়ার পর যেন পাহাড় থেকে তীব্র শীতের হাওয়া ঝাপটা মারছে। মেজর হায়াত খান ফ্লাস্ক থেকে গরম কফি ঢাকনায় ঢেলে চুমুক দিতে লাগলেন, বাম হাতে চুরুট। হুহু ঠান্ডা বাতাসের সাথে গরম কফি ভালোই লাগছে, সেই সাথে চুরুটের মিষ্টি গন্ধ। তিনি মনে মনে হাসলেন, রানিয়া তাঁর কফি আর চুরুট একসাথে খাওয়া একদম পছন্দ করে না। এটা নিয়ে সে প্রায়ই সে খুব রাগ করে। হায়াত খান সে রাগ খুব উপভোগ করেন। কারণ মেয়েটা রেগে গেলে তাঁর রূপ যেন খোলস ছেড়ে আরো বেশি উম্মুক্ত হয়। তিনি নিজের মনে হাসলেন, কে যেন বলেছিল, বিয়ের পনের বছর পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ভাই-বোনের মতো হয়ে যায়। সেটা হতে আর এক বছর বাকি। কিন্তু তাঁর মনে হয় না, এক বছর পর রানিয়াকে তাঁর বোনের মতো মনে হবে। তাকে এখনো তাঁর প্রথম দিনের মতোই নতুন মনে হয়। তিনি যতবার দেখেন ততোবার মনে হয়, এই পরি মেয়েটা বেহেশত থেকে তাঁর কাছে এলো কী করে? এ মুগ্ধতা কখনোই শেষ হবে না। ভাবতে ভাবতে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, পাঁচ মাস হলো রানিয়াকে তিনি দেখেন না। পূর্বাঞ্চলে আসার আগের রাত তাঁরা লাহোর ক্যান্টনমেন্টে আর্মি মেসে রাত কাটিয়েছিলেন। দুজনের কেউ ঘুমাননি। সৈনিকদের চোখের জল ট্রেইনিং একাডেমিতেই শুকিয়ে যায়, তাই তিনি কাঁদেননি, কিন্তু রানিয়া সৈনিক নয়, সৈনিকের স্ত্রী। না কাঁদার ট্রেইনিং তার নেই। সারারাত তার ফুঁপানোর শব্দের কথা মনে পড়লে মেজর হায়াতের ঘুম ভেঙে যায়, এমনও হয়েছে যুদ্ধের তীব্রতায় দৃশ্যটি মনে পড়লে তাঁর হাত বন্দুকের ট্রিগারে থেমে যায়। তিনি জানেন এটা উচিত না, একজন সৈনিকের সবচে বড়ো দূর্বলতা হলো আবেগ, তিনি ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে নিলেও প্রতিপক্ষ তা সরাবে না। সেক্ষেত্রে তাঁর রানিয়ার কাছে ফিরে যাওয়া হবে না। তাঁর কাছে যাবে কমান্ডার ইন চীফের সই করা একটি শোক বার্তা। লাশও যাবে না। এখন আর পূর্বাঞ্চল থেকে নিহত যোদ্ধাদের লাশ পশ্চিমে ফিরিয়ে নেওয়া হয় না। এত কার্গো প্লেন তাঁর বাহিনীর নেই। তাছাড়া বডিব্যাগে ঢাকা লাশ পশ্চিমে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। জনগন মনোবল হারাবে। কমান্ডার ইন চীফ তা চান না। যেকোনো মুহূর্তে ভারত কাশ্মির বর্ডার দিয়ে ঢুকে পড়ার কথা শোনা যাচ্ছে। এখন আর যাই হোক, জনগনের মনোবল নষ্ট করা যাবে না। পরদিন বিদায়ের সময়টা তাঁর সবসময় মনে থাকবে। রানিয়া তাঁকে ইঙ্গিতে বাথরুমে যাওয়ার জন্যে বলছে। তিনি অবাক হয়ে তাকাতেই সে চোখের ইঙ্গিতে অস্থিরতা প্রকাশ করলো। তিনি বিষ্ময় নিয়ে বাথরুমে ঢুকতেই পেছন পেছন রানিয়া এলো, তারপর বেসিনের কল ছেড়ে তাঁর কানের কাছে মুখ এনে বললো, “আমার ধারণা তোমাদের এ মেসে কথাবার্তা টেপ হয়, তাই এখানে এলাম, আমার কিছু জরুরি কথা আছে।“ “কী কথা?” তিনি ফিসফিস করে বললেন। “ তোমাদের ইস্টার্ণ কমান্ডার নিয়াজি একটা হারামজাদা। সে তার বাহিনীকে বাঙালি মেয়েদের রেইপ করার অবাধ পারমিশন দিয়ে বলেছে, ওই এলাকার সব মানুষ মালাউন, তাই সব মেয়ের পেটে খাঁটি মুসলমান বাচ্চার জন্ম দিতে হবে”—বলতে বলতে রানিয়ার চোখ কান লাল হয়ে গেলো। সে ফোঁসফোঁস করছে, রাগের সাথে ফেটে বের হয়ে আসছে আগুনের মতো সৌন্দর্য। সে হিসহিস করে বললো, হি হিমসেলফ ইজ আ বাস্টার্ড, কিন্তু তুমি কথা দাও তোমার হাতে বা তোমার অধীনস্ত বাহিনীর হাতে একটি বাঙালি মেয়েও ইজ্জত হারাবে না। হোক সে হিন্দু কিংবা মুসলাম। প্লিজ, প্রমিজ মি।“মেজর হায়াত তার কাঁধে হাত রেখে বললেন, “আই ডু প্রমিজ।” রানিয়ার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো, সে মেজরের হায়াতে কানের লতিতে ছোট্ট কামড় দিয়ে বললো, “অ্যানোদার প্রমিজ প্লিজ।“ “কী? তিনি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠছে।“ তুমি ফিরে আসবে, ইউ উইল কাম ব্যাক টু মি ইনট্যাক্ট।“তাঁর উত্তপ্ত শরীরে হঠাৎ শীতলভাব নেমে এলো। তিনি আবার কিছুটা কেঁপে ওঠলেন। কারণ ইন্টেলিজেন্স রিপোর্ট বলছে, পূর্বাঞ্চলের অবস্থা ভালো নয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান যেমনটি ভেবেছিলেন তা ঘটছে না। প্রেসিডেন্টকে তাঁর এডভাইজাররা বলেছিলেন, প্রথম আক্রমনের পরই বাঙালিরা ঠান্ডা হয়ে যাবে। আর্মি দেখলেই পেচ্ছাব করে দেবে, কিন্তু তা হয়নি। সেখানে উল্টো ঝড় বইছে। পাকিস্তান আর্মিতে প্রচুর হতাহত হয়েছে। টাঙ্গাইল নামের একটি জায়গা নাকি প্রায় মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। বাঙালিরা ভারতে বসে সরকার গঠন করেছে। তাই হেড কোয়ার্টার থেকে নির্দেশ এসেছে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণের। গতকাল চীফ জেনারেল হামিদ খান লাহোর ক্যান্টনমেন্টে বলেছেন “ভুখা নাঙা মানুষের আমার দরকার নেই, জাস্ট হ্যাভ দা ল্যান্ড। হাউ ম্যানি মিলিয়নস ইউ কিল, আই ফাক দ্যাট। আমার দরকার মানচিত্র আর কিছু না।“ মেজর হায়াত অনেকক্ষণ চুপ করে রানিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন, তাঁর আবার মনে হল, এ পরি মেয়েটি লাহোর ক্যান্টের আর্মি মেসে কী করছে? তারপর তিনি মৃদু স্বরে বললেন, “আই প্রমিজ, আই উইল কাম ব্যাক ওয়ান পিস।” পাঞ্জাব রেজেমেন্টের ‘জিহাদ টু’ রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর হায়াত তাঁর কথা রেখেছেন। পাঁচ মাসের যুদ্ধে তাঁর হাতে অসংখ্য শত্রু মারা গেলেও একজন মহিলারও অসম্মান হয়নি। তাঁর সৈনিকদেরও তিনি এটা তিনি করতে দেননি। তিনি জানেন এ মজা লুটতে না পারায় ইউনিটে কিছু ক্ষোভ আছে, কিন্তু তাঁর পরিষ্কার নির্দেশ, মহিলাদের গায়ে হাত তুললে তাঁকে গুলি করা হবে এবং তাঁর ইউনিটের সবাই বিশ্বাস করে তিনি এটি করবেন।মেজর হায়াত রানিয়া থেকে বাস্তবে ফিরে এলেনআচমকা কড়া ব্রেকে গাড়ি থেমে যাওয়ায়। তিনি উইন্ডশিল্ডে বাড়ি খাওয়া থেকে কোনো রকমে মাথা রক্ষা করে ড্রাইভারের দিকে তাকালেন। সে প্রায় ফিসফিস করে বললো, স্যার গাছ পড়ে আছে, রাস্তা বন্ধ—-তার কথা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ গতিতে মেজর সাহেব গাড়ি থেকে ডাইভ দিয়ে বাইরে পড়লেন, তার আগে চিৎকার করে বললেন, “সোলজারস ফ্যান আউট- ছড়িয়ে পড়ো, অ্যামবুশ।”প্রায় সমান গতিতে পিকআপের পেছন থেকে সৈনিকেরা ঝাঁপ দিলো, মাটিতে পড়ার আগেই তাদের হাতে উঠে এসেছে স্টেনগান।এরপর ছুটে গিয়ে তাঁরা আশ্রয় নিলেন একটি টিলার পেছনে। সামনে রাস্তা জুড়ে বিশাল গাছ দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়েছে। জিহাদ টু রেজিমেন্টের তেরজন সৈনিক অপেক্ষা করতে লাগলেন শত্রুর গুলি ছুটে আসার জন্য।দশ মিনিট কেটে গেলো। চারিদিক নিস্তব্দ। কোনো গুলির চিহ্নও নেই। মেজর হায়াত আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করলেন, তারপর বললেন, “মনে হয় ফলস অ্যালার্ম, আমি দেখছি।”তিনি ক্রল করে সামনে এগুনোর চেষ্টা করতেই খপ করে তাঁর হাত চেপে ধরলেন হাবিলদার সেকান্দর, তিনি বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “স্যার,আপনি না, আমি যাই—-“মেজর হায়াত তার হাত সরিয়ে দিয়ে বললেন, “এনসিও, একজন কমান্ডার যুদ্ধে আগে থাকেন, পেছনে নয়। ইউ স্টে হিয়ার, টেইক কেয়ার অব মাই বয়েজ।” তারপর আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি ক্রল করে সামনে এগিয়ে গেলেন। রাস্তায় পড়ে থাকা গাছের কাছে গিয়ে তিনি কিছুক্ষণ মাটিতে লেপ্টে রইলেন৷ না, কোনো আক্রমণের চিহ্ন নেই। তারপর তিনি উঠে দাঁড়িয়ে হাতের ব্যাটন দিয়ে নিজের উরুতে চাপড় মারতে লাগলেন। এমন কি গাড়ি থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সময়ও তিনি কমান্ড ব্যাটন হাত ছাড়া করেননি।টিলার ওপার থেকে সৈনিকেরা দেখছে একজন অসমসাহসী অধিনায়ককে, তাঁর মুখে কৌতুকের হাসি। তাদের মনে হচ্ছে মৃত্যুকে খুব মানুষই এমন ব্যঙ্গ করে উড়িয়ে দিতে পারে।নভেম্বরের শীতের সকালে কুয়াশা ভেজা রোদের আলোয় তাঁকে দেখে মনে হচ্ছে একজন গ্রীক রাজপুত্র দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর কাঁধে ঝিলিক মারছে সামরিক পোশাকে আঁকা চাঁদ তারা।একটু পর মেজরের কড়া কমান্ড শোনা গেলো, “বয়েজ, কাম আউট, ফলস অ্যালার্ম।”পিকআপ দিয়ে টেনে গাছটি সরাতে দলটির প্রায় এক ঘন্টার মতো লেগে গেলো।সময়টা মেজর হায়াত উপভোগ করলেন টিলায় বসে। চারিদিকে এত সবুজ, তার পাশে উম্মত্ত নদী, এমন মনোরম দৃশ্য তিনি খুব কম দেখেছেন। তার সাথে যোগ হয়েছে গরম কফি আর কড়া চুরুট। তাঁর মনে হলো কেবল একজন সৈনিকই যুদ্ধের মধ্যে মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রকৃতির এমন শিল্প রূপ উপভোগ করতে পারে, আর কেউ না।রাস্তা পরিষ্কার করার পর হাবিলদার সেকান্দর বললো, “স্যার, আমরা কি আশেপাশের গ্রামগুলোতে রেইড করতে পারি? মনে হয় ব্যারিকেড যে বান্দির বাচ্চারা দিয়েছে তারা সেখানেই লুকিয়ে আছে।”‘ডোন্ট টক লাইক ফুলিশ”, গলার রগ ফুলিয়ে মেজর হায়াত ধমকে উঠলেন, “আমাদের আর্মির বেকুবের দল সব সময় এ ভুলটা করে। যারা এটা করেছে, তারা কি মায়ের দুধ খায় যে আশেপাশে থাকবে? তারা এ এলাকার চৌদ্দ মাইলের মধ্যেও থাকবে না। পালিয়ে যাবে। এ সহজ সত্যটা তোমরা বুঝো না এবং না বুঝে সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দাও৷ নীরিহ মানুষ মেরে বীরত্ব দেখাও, আসল কালপ্রিটদের চুলও ছিড়তে পারো না। যুদ্ধে শুধু হাতিয়ার হাতে প্রতিপক্ষকে মারাটাই সৈনিকের কাজ, সাধারণ মানুষ নয়। আন্ডারস্ট্যান্ড?””ইয়েস স্যার।””ওকে লেটস মুভ।””ইয়েস স্যার।”মেজর হায়াত লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠতে উঠতে নিজের মনেই বললেন “মাদারফাকার —“হাবিলদার সেকান্দর বুঝতে পারছে না কাকে গালিটা দেওয়া হলো, তাকে না রাস্তায় গাছ ফেলা বানচোতদের।গাড়িতে উঠে ওয়্যারলেস বার্তা শুনে মেজরের মন আবার ভালো হয়ে গেলো। কারণ ঢাকার সেন্ট্রাল কমান্ড থেকে জানানো হচ্ছে, ওয়াশিংটনে ইন্দিরা গান্ধী প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কান মলা খেয়েছেন। আমেরিকা জানিয়ে দিয়েছে, তারা পুরোনো বন্ধু পাকিস্তানের সাথেই থাকবে। পুরো পাকিস্তান আর্মি এ খবরের জন্যই অপেক্ষা করছিলো।তিনি জানালা দিয়ে একদলা থুথু ফেলে নিজের মনেই বললেন, ‘ফাকিং বীচ’।এবার কারো সন্দেহ রইলো না মেজর সাহেব কাকে গালি দিচ্ছেন।সেদিন ছিল ৭ নভেম্বর, ১৯৭১।অনেক বছর পর ২০০৫ সালে আমেরিকার কিছু ক্লাসিফায়েড তথ্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হলে দেখা যাবে, প্রায় একই সময়ে প্রেসিডেন্ট নিক্সনও মিসেস গান্ধীকে একই গালি দিয়েছিলেন। কিছুদূর আসার পর রাস্তার পাশে ভাঙাচোরা একটি চায়ের দোকান দেখা গেলো। লাকড়ির চুলায় ডেকচি থেকে গরম চায়ের ধোঁয়া উড়ছে। তা দেখে মেজর হায়াতের চায়ের তেষ্টা পেলো। তাঁর মনে হলো দলবল নিয়ে চা খেলে খারাপ হবে না। এতে সৈনিকদেরও কিছুটা বিশ্রাম হবে। রাস্তা থেকে বিশাল গাছ সরিয়ে তাঁরা ক্লান্ত। তিনি প্রায় ধমকের সুরে ড্রাইভারকে বললেন, হল্ট।সাথে সাথে কড়া ব্রেক করে গাড়ি থেমে গেলো।দোকানে ঢুকে দেখা গেলো দোকানি ছাড়া দুজন নীরিহ বয়স্ক মানুষ চা খাচ্ছেন। আচমকা পাকিস্তানি আর্মি দেখে তাঁরা সবাই কাঁপতে কাঁপতে উঠে দাঁড়ালেন। একজনের হাতের ধাক্কায় চায়ের কাপ নিচে পড়ে গেলো। দোকানি তোতলাতে তোতলাতে প্রাণপণে চিৎকার করে উঠলেন, “পাকিস্তান জিন্দাবাদ। “মেজর হায়াত হাসতে হাসতে বললেন, “ভাইলোগ ডর না নেহি, মেরা দোস্ত হ্যায়, আমরা বন্ধু, শত্রু নই, দয়া করে আমাদের চা খাওয়াতে পারো? গরম চা?”দোকানি ভাঙা তোতলানো কন্ঠে বললেন “আলবত স্যার।” বলেই প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে চা বানাতে লাগলেন,কাঁপতে কাঁপতে বাকি দুজনও তাঁর সাথে হাত লাগালেন।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মেজর হায়াত তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ওয়ান্ডারফুল, থ্যাংক ইউ।”দোকানদার কী বুঝলেন কে জানে, কিন্তু উত্তর দিলেন, “হুজুরের মেহেরবানি।””বাড়ি কোথায় তোমাদের।”তিনজন প্রায় একসাথে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে সামনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে সমস্বরে বললেন, “ওই গ্রামে স্যার।””গুড, ইজ দেয়ার অ্যানি মুক্তি? তোমাদের এখানে মুক্তিবাহিনী আছে?”এ প্রশ্নে তিনজনের চেহারা মুহুর্তে সাদা হয়ে গেলো, তারপরও তাঁরা আবার একই সাথে বলে উঠলেন, “না, স্যার, আমরা সবাই মুসলমান।””সাচ্চা মুসলমান?” হায়াতের কন্ঠে কৌতুক,”জি স্যার, সাচ্চা হ্যায়”, এবার দোকানি একাই ফ্যাসফ্যাসে গলায় উত্তর দিয়ে দেওয়ালে ঝুলানো জিন্নাহ সাহেবের ছবি দেখিয়ে দিলেন।মেজর হায়াতের চেহারায় কৌতুকের ভঙি আরো বিস্তৃত হলো, তিনি বললেন, ” ইয়েস, গুড মুসলিম। জিন্নাহ সাহেবের ছবি দেখে খুশি হলাম। ওকে, নাউ বাই, গুড মুসলিম।” বলতে বলতে তিনি পাঁচ টাকার একটি নোট দোকানদারের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে আবার লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠলেন। তাঁকে অনুসরণ করলো তাঁর বাহিনী। গাড়ি চলা শুরু করলে তিনি পেছন ফিরে দোকানি ও তাঁর খদ্দেরদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়তে লাগলেন।দোকান থেকেও প্রাণপণে হাত নেড়ে তার জবাব দেওয়া হলো। দলটি তাদের গন্তব্য ইয়াকুবদন্ডি গ্রামে এসে পৌঁছালো সকাল এগারোটার দিকে। এত সময় লাগার কথা নয়। রাস্তায় বাঁধা পড়ায় দেরি হলো। তাদের গাড়ি যখন মাওলানা মোতাহার হোসেনের বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালো তখন সেখানে হুলুস্থুল পড়ে গেলো। কেউ কেউ সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে পালিয়ে গেলো, যারা পারলো না তাদের মনে ক্ষীণ আশা এত বড়ো বুজুর্গ পীর সাহেবের দরবারে এরা মনে হয় কোনো ক্ষতি করবে না। শোনা যায় এরা পীর ফকিরকে খুব মান্য করে।তারা ভয়ে ভয়ে দল বেঁধে আর্মির গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। সবার মুখে শ্লোগান, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’, একজন আবার কোত্থেকে জোগাড় করে একটি পাকিস্তানি পতাকা বাঁশের আগায় ঝুলিয়েছে। সেটা দেখে অন্যদের মনে কিছুটা বল ফিরে এলো। তারা আবার জানপ্রাণ দিয়ে চিৎকার করে উঠলো, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ।‘ দেখা গেলো তাদের ধারণাই ঠিক। মেজর হায়াত হাসি মুখে সবার সাথে হাত মেলালন, জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপ ক্যায়সে হ্যায়, ভাইলোগ?’ বিনয়ে মাটির সাথে মিশে যেতে যেতে সবাই বললো, তারা ভালো আছে, খুব ভালো আছে। তারপর মেজর সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “হুজুরের সাথে দেখা করার অনুমতি পাওয়া যাবে?” তাঁর কণ্ঠ নরম, সেখানে গভীর শ্রদ্ধার ছাপ। সবাই প্রায় একসাথে বলে উঠলো, যাবে, অবশ্যই যাবে, হুজুর তাঁর হুজরাখানাতেই আছেন।মেজর হায়াত শুধু হাবিলদার এবং আরেকজন সৈনিককে সাথে আসার ইঙ্গিত দিয়ে উর্দুতে অন্যদের যে নির্দেশ দিলেন, তার অর্থ হচ্ছে, তারা যেন এখানেই অপেক্ষা করে, কিন্তু কোনোভাবেই কোনো অশোভন চারণ বা কাউকে মারধোর করা যাবে না। এ জায়গাটি অতি পবিত্র জায়গা, এর সম্মান যাতে বজায় থাকে। তাঁরা তিনজন যখন হুজরাতে পৌঁছালেন তখনো মাওলানা সাহেব জানেন না তাঁর বাড়িতে আর্মি এসেছে। কারণ তিনি তখন নফল নামাজে ব্যস্ত। এসময় তিনি আট রাকাত নফল নামাজ পড়েন। বাইরে থেকে মেজর সাহেব দেখলেন হুজুর নামাজ পড়ছেন, তিনি ভেতরে না ঢুকে অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। মাওলানা সাহেব নামাজ শেষ করে দীর্ঘ মুনাজাত করলেন, বাইরে পাকিস্তান আর্মির তিনজনের দল এবং তাঁদের পথ দেখিয়ে আনা মুরিদদের দলও হাত তুললেন। মুনাজাত শেষে মাওলানা সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, বাইরে কারা? মেজর হায়াত উর্দুতে উত্তর দিলেন, “মুর্শিদে পাক, আমি একজন নবীজির নাদান উম্মত মেজর হায়াত, আপনার সাক্ষাৎ প্রত্যাশী, অনুমতি দিলে বাধিত হবো।“ মাওলানা মোতাহার সাহেব একটু অবাক হলেন, পাকিস্তান আর্মির মেজর তাঁর কাছে কী চায়? তিনি উত্তর দিলেন, “মহান আল্লাহপাকের ইশারায় আপনি এখানে এসেছেন। আমার সাধ্য নেই নিষেধ করার। দয়া করে ভেতরে আসুন।“ মেজর হায়াত উবু হয়ে বুট খুললেন, সঙ্গীদেরও তা করতে নির্দেশ দিলেন, তারপর ভেতরে ঢুকলেন। তবে সাথে আসা মুরিদের দলকে সেখানে প্রবেশে নিষেধ করতে লাগলেন। তিনি তাঁর দুসঙ্গীকে নিয়ে পীর সাহেবের সাথে একা কিছু কথা বলতে চান। পীর সাহেব জায়নামাজ গুটিয়ে খাটের পাশে রাখা ইজি চেয়ারে বসলেন, তারপর বললেন, “ দয়া করে বসুন। তা আমার কাছে কী ব্যাপার?” সামনে দর্শনার্থীদের চেয়ারে শুধু মেজর হায়াত খান বসলেন। সঙ্গী দুজন তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। মাওলানা সাহেব তাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনারা বসবেন না? দুজনেই মাথা নেড়ে ‘না’ করে দিলেন। মাওলানা সাহেব নিজের মনেই বললেন, “ও আর্মিতে তো অফিসারদের সামনে জওয়ানরা মনে হয় বসতে পারে না। হায়! খোদা রুহ তৈরি করার সময় কোনো তফাত রাখেন না, যা তফাত তা মানুষই তৈরি করে।“ মেজর হায়াত কিছুটা বিব্রত কণ্ঠে বললেন, “ জনাব, অনুমতি দিলে জরুরি কিছু কথা ছিলো তা বলতে চাই। আমাদের সময় কম।“ “অবশ্যই বলবেন সাহেব, তার আগে কিছু খান।“ “পাক মুর্শিদ, সেটা লাগবে না, আমাদের তাড়া আছে।“ “তা হয় না, মেহমানকে খালি মুখে বিদায় দেওয়া যায় না। এটা সুন্না বিরোধী।“ বলতে বলতে মাওলানা সাহেব হাঁক দিলেন, “বাইরে কে আছো, মেহমানদের নাস্তাপানির ব্যবস্থা করো।“ কিছুক্ষণ পর একজন হুকুমবরদার চা আর বেলা বিস্কুট নিয়ে রুমে ঢুকলেন। মাওলানা মোতাহার বললেন, “আমি দরিদ্র মানুষ, ভালো কিছু খাওয়ানোর ক্ষমতা নেই। দয়া করে একটু মুখে দিন।“ খাওয়া শেষে মেজর সাহেবই প্রথম মুখ খুললেন, “জনাব আপনি আল্লাহতালার পেয়ারা বান্দা। আমরা তা জানি। ইসলামের খেদমতে আপনার অবদান এ এলাকার সবাই খুব সম্মানের সাথে দেখে। তারা আপনাকে ভক্তি করে। আমরাও করি। আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে তা বলছে, প্রায় দেড়শো বছরের বেশি আপনি ও আপনার পূর্ব পুরুষেরা এ খেদমত করে আসছেন। তাই আমাদের জিওসি সাহেব আপনাকে সালাম জানিয়ে তাঁর জন্য দোয়া করতে বলেছেন, বিশেষ করে তাঁর কন্যা সন্তান সম্ভাবা, তিনি তার জন্যও দোয়া চেয়েছেন।“ মাওলানা সাহেব হাত বাড়িয়ে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, “একমাত্র নবীজী ছাড়া আমরা কেউ দাবি করতে পারি না যে আমরা খোদাতালার পেয়ারা বান্দা। বিশেষ করে আমি তো পারিই না। তবে হ্যাঁ আপনার জিওসি সাহেবকে বলবেন আমি দোয়া করছি তাঁর কন্যা যাতে বেহেশতের গোলাপ প্রসব করে।“ এবার মেজর হায়াত তাঁকে থামিয়ে বললেন,”শুকরিয়া, জনাব। আপনি যাই বলুন না কেন আমাদের বিশ্বাস আপনি পেয়ারা বান্দা, মুর্শিদে পাক। যাক যা বলছিলাম, আপনি শুধু বুজুর্গ একজন মানুষ না, আমার পিতাজীর বয়সী, আশা করি, আপনি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন।“ “অবশ্যই মেজর সাহেব এবং আপনার পিতা ও মাতাজীকে আমার সালাম পৌঁছে দেবেন।“ “জি, জনাব, তবে আমার মাতাজী বেশ আগেই ইন্তেকাল করেছেন।“ “আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে নসীব করুন।“ “শুকরিয়া জনাব, এবার কি আমি আসল কথায় আসবো?“ “আসুন, সংক্ষেপে বললে ভালো হয়, এক ঘন্টা পর আবার আমার নফল নামাজ পরার সময় হয়ে যাবে, তারপর জোহর।“”জি, জনাব। আমি দ্রুত সারবো। আচ্ছা, হুজুর, আপনি কি পাকিস্তান নামের মুসলিম রাষ্ট্রে আস্থা রাখেন?””মেজর সাহেব সাতচল্লিশ সালে আমি যখন দেওবন্দ মাদ্রাসার ছাত্র তখন রাস্তায় শ্লোগান দিয়েছি, “হাত মে বিড়ি মুখ মে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান।””ধন্যবাদ পাক মুর্শিদ, আপনাদের কারণেই আজ আমি আর্মি মেজর, পাকিস্তান না হলে সেপাই থাকতাম, তা এ দেশকে রক্ষার জেহাদে আপনি কি অংশ নিতে পারেন না?””কীভাবে?” একটু অবাক হয়ে মাওলানা সাহেব জিজ্ঞেস করলেন।”এই যে আপনি বেশ কয়েকটি হিন্দু ফ্যামিলিকে গোপন স্থানে লুকিয়ে রেখেছেন তাদের ঠিকানা আমাদের দেবেন। কথা দিচ্ছি, তাদের দিকে একটি গুলিও ছোড়া হবে না, একজন নারীও বেইজ্জত হবেন না।”.মাওলানার চেহারায় গভীর বিষ্ময়। তিনি অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, “এ অদ্ভুত খবর কোথায় পেলেন সাহেব।”” আমাদের ইন্টেলিজেন্স খুব শক্ত, পাক মুর্শিদ, এমন কী আপনার দরবারেও আমাদের লোক আছে। সবচে বড়ো কথা আমরা জানি আপনি।মিথ্যা বলেন না।”মাওলানা মোতাহার নিজের মনে মীর্জা গালিবের একটি শের উচ্চারণ করলেন,”গো ম্যায় রাহা রহিনে সিতমহায়ে রোযগার”,যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘প্রত্যহের তুচ্ছতার কাছে যদিও বন্ধক ছিলাম।’ তারপর বললেন, আমি ভেবেছিলাম আমার ভক্তরা আমাকে পিতৃজ্ঞান করে, ভালোবাসে, এখন দেখছি তারা নয় আমিই তাদের কারো কারো ভানের কাছে বন্ধক ছিলাম।মেজর হায়াত নম্র কণ্ঠে বললেন, “হয়তো তাই, পিতাজী। কিছু মনে করবেন না, আপনাকে আমার এভাবেই ডাকতে ইচ্ছে করছে৷ পিতাজী,এবার বলুন আমাদের ইনফরমেশন ঠিক কি না?””জি, ঠিক। আমি তা রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী করেছি। তিনি প্রতিবেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার হুকুম দিয়েছেন। জাত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। তা এখন কী করতে চান?””পিতাজী আপনি আমাদের তাঁদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন। আমি কথা দিচ্ছি, তাদের চুল পরিমাণ ক্ষতি হবে না। শুধু তাদের কলেমা পড়িয়ে মুসলমান করা হবে। এ পাক মাটিতে ইসলাম নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব।””মেজর সাহেব, এদেশের মানুষ কোনো ব্যথা পেলেই চিৎকার করে বলে, ‘ও আল্লাহ’, খাবার মুখে দেওয়ার সময় বলে ‘বিসমিল্লাহ’, খাওয়া শেষ হলে বলে ‘ আলহামদুলিল্লাহ’, এদেশে বাচ্চা জন্ম নিলে যে কাজ সবার আগে করা হয় তা হচ্ছে আজান দেওয়া, আর আপনি বলছেন এখানে ইসলাম নিশ্চিত করতে হবে?” হাসালেন সাহেব।””পিতাজী, এটি একটি সামরিক আদেশ। এর বাইরে যাওয়ার কোনো উপায় আমার নেই। তারপরও বলি, আপনি যা বললেন তা সত্য হতে পারে, কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আপনার দেশের মানুষ প্রকৃত মুসলমান নয়। আপনি দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন পিতাজী।” মাওলানা সাহেব মৃদু কণ্ঠে পবিত্র সুরা কাফিরুন উচ্চারণ করলেন;”কুল ইয়া আইউহাল কাফিরূন। লা আ’বুদু মাতাবুদুন। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মা আবুদ। ওয়া লা আনা আবিদুনা মা আবাদতুম। ওয়ালা আনতুম আবিদুনা মাআবুদ। লাকুম দীনুকুম ওয়ালীয়া দ্বীন।”তিনি বিশেষ জোর দিলেন শেষ আয়াতগুলোতে ‘লাকুম দিনুকুম অলিয়া দিন’- তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য, আমাদের ধর্ম আমাদের জন্য। ’ তারপর বললেন, “স্বয়ং খোদাতালাই যেখানে যার ধর্ম তার বলেছেন, সেখানে আমাদের মতো অধম বান্দাদের কী অধিকার আছে তাতে হাত দেওয়ার?”মেজর সাহেব নম্র কণ্ঠে বললেন, “পাক মুর্শিদ, আপনি আমাকে হ্যাঁ বা না বলুন। আমি চাই না আপনার ক্ষতি হোক। এদেশে আসার আগে আমি আমার স্ত্রীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, মহিলাদের গায়ে হাত দেবো না, ঐ মালাউনদের ঠিকানা না দিলে আমাকে সে প্রতিজ্ঞা ভাঙতে হবে এবং তার প্রথম শিকার হবে আপনার তের বছরের নাতনি।”বৃদ্ধ মাওলানা থমকে গেলেন, তারপর তাঁর চোখে বাজের আগুন জ্বলে ওঠলো, তিনি দৃঢ়ভাবে উচ্চারণ করলেন, “না। তাঁদের রক্ষা করা আমার ঈমানী দায়িত্ব এবং আপনাকে মনে করিয়ে দিতে চাই যেকোনো যুদ্ধে মহিলা ও শিশুদের রক্ষা করা নবীজীর সুন্নাহ।””হ্যা অথবা না জনাব।”” না। পীর সাহেবের কন্ঠে ইস্পাত কাঠিন্য। ঘন্টাখানেক পর একদল ভীত সন্ত্রস্থ মুরিদের দল দেখলেন,তাঁদের অতি শ্রদ্ধেয় পীর সাহেবকে দরবার শরীফের প্রাচীণ বটগাছের সাথে বাঁধা হয়েছে। তিনি তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে তাকানোতে দুনিয়ার সব পবিত্রতা। ভয় সে পবিত্রতাকে পরাজিত করতে পারে না। তিনি বিড়বিড় করে আওড়াচ্ছেন সুরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াত, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ;”ধর্মের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত মত ও পথকে সঠিক মত ও পথ থেকে ছাঁটাই করে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে।”তাঁর পবিত্র চোখ থেকে বেড়িয়ে আসছে বিশ্বাসের আগুনের হলকা।একটু পর হালকা পায়ে এগিয়ে গিয়ে মেজর হায়াত মাওলানা সাহেবের কপালে রিভলবার ঠেকালেন।প্রাচীন বটবৃক্ষের পাতার ফাঁকে তাঁর উপর রোদ ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এখন তাঁকে রোদের আলোয় গ্রীক রাজপুত্রের মতো লাগছে না। মনে হচ্ছে দুপায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে একটি নেকড়ে। তাঁর দুকাঁধে ঝিলিক মারছে সোনালী ‘চাঁদতারা’। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ‘কাপুরুষ’ সামরিক চিহ্ন আর কখনো তৈরি হয়নি, হবেও না।#আসুনমায়াছড়াই। ( ১.ক্রেডিটসহ গল্পটি শেয়ার/কপি করা যাবে। ২. মতামত পেলে ভালো লাগবে।)