মন ভালো করে দেওয়ার মতো ঘটনা।

রতন টাটা তখন টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান।তাঁর এক বোন ছিলেন বেশ অসুস্থ এবং নিঃসঙ্গ।জীবনটা আরো স্বাচ্ছন্দ্যময় করার তাঁর থাকার জন্য ব্যবস্থা হলো মুম্বাই এর বিখ্যাত ‘তাজমহল’ হোটেলে। পাঁচ তারা এ হোটেলের মালিক টাটা গ্রুপ নিজেই।

রতন টাটা প্রতিদিন কাজ সেরে বোনকে দেখতে যান। গল্প-গুজব করে একা, অসুস্থ বোনের মন ভালো করার চেষ্টা করেন।কোন দিন এর ব্যতিক্রম হয়নি।

একদিন কচি সন্ধ্যায় ভাই-বোন গল্প করছেন। দিদি আধ শোয়া বিছানায়, রতনজী সামনে চেয়ারে। জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে দিন মিলিয়ে রাত নামছে।রতন টাটা একটু চিন্তিত। কারণ তাঁর দিদির স্বাস্থ্য বেশি ভাল যাচ্ছে না। দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। ডাক্তাররাও বুঝতে পারছেন না কেন এ রকম হচ্ছে?

এমন সময় দরোজায় নক হলো।রতনজী নিজেই দরোজা খুললেন। বাইরে দাঁড়িয়ে হোটেলের হাউজ কিপিংয়ের একজন ক্লিনার। রুম পরিষ্কার করতে এসেছেন।তাঁকে ভেতরে ঢুকতে দিয়ে ভাই-বোন আবার আলাপ করতে লাগলেন। বিষয় দিদির খারাপ হতে থাকা স্বাস্থ্য।রতন টাটা ব্যাপারটি নিয়ে খুব চিন্তিত। এমন সময় ঘর মুছতে মুছতে অযাচিতভাবে ক্লিনার ভদ্রমহিলা রতন টাটাকে বলে উঠলেন, “স্যার, এ হোটেলের সমুদ্রমুখি যে সব স্যুইট আছে, তাতে ম্যাডামকে ট্রান্সফার করলে মনে হয় ভাল হতো। সাগরের হাওয়া তো স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।”

রতন এবং তাঁর বোন একটু অবাক হলেন। হোটেলের এ পর্যায়ের কর্মীরা সাধারণত গ্রুপের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলেন না। তাঁরা একটু বিরক্তও হলেন। বিরক্তি চরমে উঠলো, যখন ক্লিনার ভদ্রমহিলা বললেন, “স্যার, ওই স্যুটগুলোর ভাড়া একটু বেশি, কিন্তু এটা তো আপনাদের হোটেল, তাই একবার বললেই ভাল ডিসকাউন্ট পাবেন।”

রতন টাটা আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারলেন না। তিনি গর্জে উঠে বললেন, “টাটারা চ্যারিটি দেয়, নেয় না। নাউ ইউ গেট লস্ট।”

তাঁর রুদ্রমূর্তিতে যুগপৎ ভীত এবং আহত ক্লিনার মহিলা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।এর ঘন্টা দুয়েক পর ক্লিনারের ডিউটি শেষ হলো। তিনি বাড়ি ফিরবেন। তাঁকে নিচে নামতে হবে স্টাফদের জন্য নির্ধারিত সার্ভিস লিফট দিয়ে। এটা হোটেলের পেছনে একটি বেরুনোর গেইটে তাঁকে নামিয়ে দেবে।

ভদ্রমহিলা সন্ধ্যার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে নিচে নামলেন এবং ধাক্কা খেলেন।বিশাল বিষ্ময়ের ধাক্কা!! গেইটে ৮০০ সি সির অতি পরিচিত লাল মারুতি দাঁড়ানো। তার হুইলে বসা স্বয়ং রতন টাটা। চেয়ারম্যানজী এখানে কেন? ভদ্রমহিলা অবাক হয়ে ভাবলেন।

তাঁর মাথায় ঝিলিক দেয়া প্রশ্ন মিলিয়ে যাওয়ার আগেই টাটা গ্রুপের দীর্ঘদেহী মালিক গাড়ি থেকে নেমে এলেন। বিনয়ের সাথে বললেন, “আমি এতক্ষণ আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।”

মহিলার মনে হচ্ছে তিনি স্বপ্নের মধ্যে আছেন! স্বয়ং রতন টাটা তাঁকে বলছেন বাড়ী পৌঁছে দেয়ার কথা! তাঁর মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঘুম ভেঙ্গে গেলে তিনি দেখবেন, সব ফাঁকা। সব মরিচিকা। তিনি আসলে শুয়ে আছেন বস্তির সেই পুরানো বিছানায়।কিন্তু না, এটা স্বপ্ন ছিলো না। কারণ রতন টাটা তাঁর দিকে একটু ঝুঁকে বললেন, “দেখুন, আমি আপনার আজ সন্ধ্যার আনন্দটুকু ধমক দিয়ে মাটি করেছি। তাই আমার দায়িত্ব হচ্ছে, কোনো না কোনোভাবে আপনাকে খুশী করে সে আনন্দের কিছুটা হলেও ফেরত দেয়া, তাই আমি আপনাকে নিজে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাই——– “আমরা সবাই মিলে যদি প্রতিদিন অন্তত একজন মানুষকেও খুশী করার চেষ্টা করি কী বিশাল একটি ‘ঘটনা’ ঘটবে ভাবলেই মন ভাল হয়ে যায়!!!

(১.সূত্র- The greatest company in the world? the story of Tata by Peter Casey.

২ এটি রিপোস্ট।

৩.পোস্টটি শেয়ার করা যাবে)#আসুনমায়াছড়াই।