মোরাল প্যারেন্টিং

রোজাবেল, মা, তোকে বলছি- ২৮রোজাবেল রকিং চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে। হাসনাত আবদুল হাই স্যারের Aid – Memoire পড়ছি।রোজ বললো বাবা, কী পড়ো?”মা, হাসনাত স্যার, ওই যে কিছুদিন আগে বাসায় আসলেন, তাঁর ছোটবেলার কথা পড়ছি।””কেমন লাগছে বাবা?””উনি সব সময় ভালো লেখেন মা। এটা পড়তে পড়তে আমার ছোটো বেলায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে তখন অনেকগুলো ভুল না বুঝে করেছি। সময়টা ফিরে পেলে তা আর করতাম না।””কী ভুল?” বাবা “মারে, সে বয়স ফিরে পেলে যা করতাম তা হচ্ছে;”১. শুনতাম বেশি, বলতাম কম।২. পড়তাম বেশি, পড়ার ভান করতাম না। বুঝতাম আমার পড়ার টাকা রোজগারের জন্য বাবার কত নির্ঘুম রাত কাটে। সে টাকার মূল্য দিতাম মা।৩. সময়টা কাজে লাগাতাম বেশি, ঘুমাতাম কম।৪. বন্ধুত্বই শুধু করতাম, হিংসা কখনোই নয়।৫. মা-বাবাকেই সবচে বড় বন্ধু ভাবতাম।৬. লেখালেখি সিরিয়াসলি নিতাম।৭. স্কুলের স্যারদের ভালোবাসার মূল্য তখন দেইনি, বরং আড়ালে উল্টাপাল্টা নামে ডাকতাম। এ কাজ ভুলেও করতাম না।৮. সে বয়সে ভয়ংকর রাগি ছিলাম। সময়টা ফিরে পেলে কখনোই রাগ করতাম না।৯. বাবার পাশে বসে থাকতাম, তাঁর গায়ের গন্ধ নেয়ার জন্য।১০. টিউশনির টাকায় দাদু আর মায়ের জন্য পান-সুপারি কিনতাম। ১১. রক্তের উত্তাপ কমিয়ে মানুষকে অনেক বেশি সম্মান করতাম।১২.ভাল রান্না না হলে রাগ করতাম, খেতে চাইতাম না। আবার সেই বয়স ফিরে পেলে মধ্যবিত্তের বাজার কত কষ্টের টাকায় হয়,তা বুঝতাম। অবশ্যই বুঝতাম।১৩. বয়স্ক মানুষ,যেমন দাদা-দাদু, নানু এদের বেশি সময় দিতাম। বুঝতাম,এদের বেশি দিন পাবো না।১৪. কলোনির বাসায় মাঝে মাঝে পানি আসতো না। আব্বা ফজরের নামাজ পড়েই নিচের চাপ কল থেকে বালতি ভর্তি পানি এনে ড্রাম ভর্তি করে রাখতেন,যাতে ঘুম ভাঙার পর আমাদের সমস্যা না হয়। কিশোর বেলাটা ফিরে পেলে আমি একদিনের জন্যও আমার বাবাকে তিনতলা অব্দি পানির বালতি টানতে দিতাম না। কখনোই না।১৫. ঈদে নতুন কাপড় পছন্দ না হলে ঘর উথাল-পাতাল করতাম না। বুঝে নিতাম এ সামান্য কাপড় কেনার জন্যই হয়তো বাবাকে অনেক রক্ত পানি করতে হয়েছে।১৬. সব সময় ভালো ভালো তরকারি খেয়ে ফেলতাম না। মায়ের জন্য রেখে দিতাম। আমাদের মায়েরা প্রায়ই বাড়ির অন্যরা খাওয়ার পর উচ্ছিষ্ট যা থাকতো তাই খেতেন।।মাছের মাথা, মুরগীর রান তাঁদের ভাগ্যে ছিলো না। আহা! ভাবতেই চোখে পানি চলে আসছে মা।১৬. তোর বয়স যদি ফিরে পেতাম- তাহলে এ আফসোসগুলো যাতে বেদনার কারণ না হয়, সেদিকে মন দিতাম। সিরিয়াসলি মন দিতাম।রোজাবেলের চেয়ারে দুলুনি বন্ধ হয়ে গেছে। তার চোখে কেমন যেন বিষাদ। আমি এগিয়ে গিয়ে তার মাথায় হাত রাখলাম। আহা! কী কোমল চুল আমার কন্যার। আমি সে চুলের গন্ধ নিতে নিতে বললাম,মা, তোদের বয়সটা হচ্ছে ভালবাসা মেলে দেয়ার বয়স। মমতার কুঁড়ি মেলার সময়। দায়িত্ব বোঝার বয়স। শিক্ষা নেয়ার বয়স।এটা হচ্ছে পাল্টে যাওয়ার সময়।

আহ! যদি তা ফিরে পেতাম!

#আসুনমায়াছড়াই

(লেখাটি শেয়ার করা যাবে, ক্রেডিটসহ কপিও করা যাবে।)

Comments

Write a comment…