ম্যাডভেঞ্চার!

একজন শুভানুধ্যায়ী ব্যাপারটা শুনে বলেছিলেন, “দিস ইজ জাস্ট ম্যাডভেঞ্চার। এদের একটি প্রশংসা বাক্যের জন্য প্রায় সব লেখক মুখিয়ে থাকেন আর তুমি তা ছাপিয়েও বাদ দিচ্ছ? আনওয়াইজ, ভেরি আনওয়াইজ।”আমি হাসতে হাসতে বললাম, “স্যার, আমি শুধু এগুলো বাদ দিচ্ছি না, আরো কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”‘যেমন?’ তাঁর চোখে ব্যাপক কৌতূহল।”সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-

১। আমি নিজে এবার বইটির কোনো প্রচার করবো না। ফেইসবুকে কোনো পোস্ট দেবো না।

২। সাধারণত ‘পে ইট ফরোয়ার্ড’, ‘অনেস্ট’ এর সদস্যরা পিতৃজ্ঞানে আমার বই বের এর হলে এর প্রচ্ছদ নিজেদের প্রোফাইল ছবি হিসেবে ব্যবহার করেন। আমার বন্ধুদের অনেকেই তা করেন। এবার তা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ করা হবে।

৩। আমি বইমেলায় একদিনের বেশি স্টলে বসবো না। যাবোও না। তা হোক চট্টগ্রাম বা ঢাকা।

৪। আমার পরিচিতদের মেসেজ দেবো শুধু ব্যক্তি পরিচয়ের জন্য যাতে বইটি না কিনেন। তবে লেখক হিসেবে কিনলে সমস্যা নেই।

৫। যারা প্রি অর্ডার করবেন তাঁদের প্রলুব্ধ করার জন্য কোনো প্রভাবক ব্যবহার করা হবে না।

৬। বইটি নিয়ে কোনো আলোচনায় আমাকে ট্যাগ করা হলে তা আমার টাইমলাইনে অ‍্যালাউ করবো না। শুধু কিছু ক্ষেত্রে এটার ব্যতিক্রম হবে, যদি আমার শেখার মতো কিছু তাতে থাকে। সোজা কথায় একদম চুপচাপ আমি দেখবো, কোনো প্রচারণা ছাড়াই বইটি পাঠক নেন কি না।”

অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষটি বললেন, “কিন্তু কেন?”আমি উত্তর দিলাম, “স্যার, আমি দেখতে চাই আমি কি ভারে কাটি না ধারে?” “ভেরি রিস্কি এক্সপেরিমেন্ট!” তিনি বললেন। “হ্যাঁ, তাই। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজেকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলা দরকার স্যার।”

কিন্তু যারা তোমার লেখা নিয়ে লিখেছেন, যেমন সমরেশ মজুমদার, জাফর ইকবাল, উনারা মাইন্ড করবেন না?”

স্যার, উনাদের আমি বুঝিয়ে বলবো। তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য আমি পরে কোনো বইতে দেবো। এতে সমস্যা হবে না, কারণ তাঁরা আমার সামগ্রিক লেখালিখির মূল্যায়ন করেছেন। শুধু ছায়া সন্ধানের নন। তাই অন্য বইতেও তাঁদের মন্তব্য মানিয়ে যাবে। তাছাড়া স্যার, সত্যি বলতে কী আমি কিন্তু উনাদের লিখতে অনুরোধ করিনি, উনারা নিজেরাই লিখেছেন। সমরেশদা নিজেই যোগাযোগ করতে বলে তাঁর মতামত দিয়েছেন। জাফর স্যার ‘জলের উৎস’ পড়ে নিজেই মেইল দিয়েছিলেন। অন্যরাও নিজে থেকে মতামত দিয়েছেন। আমি নিজে থেকে চাইনি। আমার প্রকাশক ‘বাতিঘর’ এর মালিক দীপংকরদা জানেন ব্যাপারটি। আমি এদের সবার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমি ওনাদের উপর আপাতত ভর করতে চাই না, নিজের হাঁটুর জোর কত দেখতে চাই।”

তাঁকে খুব চিন্তিত মনে হচ্ছে। বললেন, “যদি ফেইল করো?”

আমি বললাম, “আপনার মতো একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর কথা শুনে আমি দশ বছর একটি শব্দও লিখিনি, প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। এবার ফেইল করলে আবার পাঁচ বছর দরজা বন্ধ করে পড়বো, তারপর মুখ বের করবো। হাহাহাহা।”

আমি চেষ্টা করেছি আমার কথা রাখতে। এমন কি সমরেশ মজুমদারের বক্তব্যসহ প্রচ্ছদ ছাপা হয়ে যাওয়ার পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুন প্রচ্ছদ ছাপা হয়েছে, যার কারণে বইটি বাজারে আসতে কিছুটা দেরিও হয়েছে।বন্ধুরা, আপনাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রকাশকের ভাষ্য অনুযায়ী আমি উতরে গেছি।খুব শিগগির ‘‘ছায়া সন্ধান” এর দ্বিতীয় সংস্করণ নিয়ে দেখা হবে। ১৬ ফেব্রুয়ারি বইটি বের হওয়ার পর মাত্র ১৩ দিনের মাথায় হাজার কপির একটি বই এর নতুন মুদ্রণ নিয়ে ভাবা যাচ্ছে কেবল আপনাদের ভালোবাসার কারণে। প্রি অর্ডারেই আপনারা ৫০০ জন বইটি সংগ্রহ করেছেন। সব মিলিয়ে আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। একই কৃতজ্ঞতা বাতিঘর ও দীপংকরদা এবং মানবিক প্রতিষ্ঠান ‘অনেস্ট’ কর্মীদের প্রতি। আমার পাগলামিকে সমর্থন দেয়ার জন্য।আমি বলেছিলাম বইমেলা শেষে আমি নির্জনতা ভাঙবো। তার আগে টু শব্দও করবো না।’ম্যাডভেঞ্চার’ এর গল্প বলে সে কথা রাখলাম।

ধন্যবাদ।

(পাঠকের কৌতূহল মেটানোর জন্য শ্রদ্ধ্বেয় সমরেশ মজুমদারের মন্তব্যসহ যে প্রচ্ছদ প্রত্যাহার করা হয়েছে দিলাম।)

#আসুনমায়াছড়াই