A A -০১

শিরোনামটি অদ্ভুত তাই না? নিচের লেখাটিতে এর উত্তর পাওয়া যাবে না। কাল দ্বিতীয় পর্বে উত্তর থাকবে। মানে হলো A A রহস্য জানতে হলে আগামীকালও আবার পড়ার ঝামেলা পোহাতে হবে। হাহাহাহা।

যমুনা ফিউচার পার্কে হাঁটছি। কিছু কেনাকাটা আছে।
এমন সময় অপরিচিত মধ্য বয়স্ক এক ভদ্রমহিলা কাছে এসে আমার দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করতে লাগলেন। মনে হচ্ছে কিছু বলতে চান, কিন্তু পারছেন না। আমি উনাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলাম।
এবার হঠাৎ পেছন থেকে ডাক এলো, এই যে শুনছেন?
পেছন ফিরে দেখি সেই ভদ্রমহিলা।
একটু অবাক হয়ে বললাম, আমাকে বলছেন?
তিনি এবার লজ্জা ঝেড়ে ফেলে বললেন, আপনি বাদল না?
জি, আমি বিস্ময় এবং সংশয় নিয়ে বললাম, আপনি?
আমি নেলি। আপনার সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম। অবশ্য অন্য ডিপার্টমেন্টে। একই শাটল ট্রেনে ভার্সিটি যেতাম। অবশ্য আপনি যদি বাদল সৈয়দ হন তবেই এ তথ্যগুলো মিলবে।
‘হ্যাঁ, আমি বাদল সৈয়দ। তবে আসলে আপনাকে আমার মনে পড়ছে না।’
আমি কিন্তু প্রথম দেখাতেই আপনাকে চিনেছি। আপনার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, তাছাড়া ফেইসবুকে রেগুলার দেখি। আপনাকে ফলো করি তো, তাই।
ধন্যবাদ নেলি, কেমন আছেন?
দাদা, আপনার কি কিছু সময় হবে? তাহলে কোথাও একটু বসি। আপনার সাথে জরুরি কথা ছিল। অনেকদিন থেকে তাই আপনাকে খুঁজছি। মেসেঞ্জারে টেক্সটও করেছিলাম, আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।
আমার ইতস্তত ভাব যাচ্ছে না। সত্যি বলতে কি আমি উনাকে এখনো পুরো চিনে উঠতে পারিনি।
তিনি হেসে বললেন, ভয় নেই, আমি আসলেই আপনার সাথে পড়তাম। এক বছরের জুনিয়র ছিলাম, আপনি , জেবা আপা, পারভিন আপা, আশরাফ ভাই এরা দল বেঁধে থাকতেন।
এবার আর সন্দেহ রইলো না যে তিনি একই সময়ে আমার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। সব নাম ঠিক বলেছেন।
‘ঠিক আছে, চলেন বসি।‘ তীব্র কৌতূহল হচ্ছে তিনি কী বলতে চান ভেবে।
আমরা ফুডকোর্টের নিরিবিলি একটি জায়গায় বসি।
জিজ্ঞেস করলাম, চা না কফি?
তাঁর মধ্যে সপ্রতিভভাব ফিরে এসেছে। বেশ জোরে হেসে বললেন, দেখা হলো মাত্র কয়েক মিনিট, এর মধ্যে আপনি তিনটি ভুল করেছেন।
মানে! অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
প্রথম ভুল আমি আপনার ভার্সিটির ছোট বোন, কিন্তু ডাকছেন, ‘আপনি’ করে। দ্বিতীয় ভুল হচ্ছে, ঢাকা আমার শহর, আপনি এখানে অতিথি, অফার করবো আমি আপনি না, এবং ভুল নয় রীতিমতো অপরাধ হচ্ছে আপনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা সুন্দরীকে মনে না রাখা। হাহাহাহা।
আমিও জোরে হেসে উঠলাম, বললাম, ওকে আমি চা নেবো, তুমি?
কফি। সাথে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই। আমিও আপনাকে তুমি বলছি। ঘোড়ার ডিমের এক বছরের সিনিয়র, আপনি বলতে আমার বয়ে গেছে।
হাহাহাহা করে হেসে উঠলাম, ‘গুড, ভেরি গুড। এবার বলো, কী বলতে চাইছিলে?’
হঠাৎ নেলির চেহারায় রাতের অন্ধকার নেমে এলো।
সে ঝুঁকে এসে বললো, দাদা, তুমি তো প্রায়ই মাদকের বিরুদ্ধে লেখো। তবে সেগুলো প্রায় সব তরুণদের জন্য। খুব দরকারি একটি বিষয় তোমার চোখ এড়িয়ে গেছে, তুমি কি তা জানো?
‘নাতো! কী সেটা?’
এলকোহল। হ্যাঁ, তোমার লেখায় ব্যাপারটি এসেছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সেগমেন্ট, মানে তরুণদের প্রসঙ্গে। কিন্তু তুমি কি জানো, শুধু তরুণেরা নয়, মধ্য বয়স্ক, সংসারী কত মানুষ এতে আসক্ত? এসব এলকোহলিক মানুষের জন্য কত সংসারে আগুন জ্বলে? কত বাচ্চারা মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে? কত স্ত্রীর গায়ে মারের কালশিটে পড়ছে? কান্নায় কত বালিশ ভিজছে? জানো তুমি?
আমি চুপ করে শুনছি, নেলি হিসহিস করে বলতে লাগলো, জানো, এরা বাবা হয়েও বাবা নয়, ভিলেন, স্বামী হয়েও স্বামী নয়, ভিলেন—হয়তো শুধু এ অভ্যেস না থাকলে এরাই পৃথিবীর সেরা বাবা হতো, সেরা স্বামী হতো। কিন্তু এলকোহল তা হতে দিচ্ছে না। বলতে বলতে সে আমার দিকে ঝুঁকে এলো, দাদা, প্লিজ এদের জন্য কিছু করো, এদের রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো যাবে না, সামাজিক কারণেই যাবে না, কিন্তু একটু মানসিক সাপোর্ট পেলেই হয়তো এরা ফিরে আসতো। প্লিজ দাদাভাই, এটা নিয়ে ভাবো।
বলতে বলতে নেলি দুহাতে মুখ ঢাকলো। কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে বললো, দাদাভাই, আমার মেয়েটি চায় তার বাবা তাকে প্রতিদিন সকালে চুমু খান, কিন্তু তা সম্ভব নয়, কারণ সে মদের গন্ধ সহ্য করতে পারে না। প্রত্যেক এলকোহলিক বাবার মুখ থেকে এ অভিশপ্ত গন্ধ দূর করার চেষ্টা করো, দাদা——–

( নেলি তার আসল নাম নয়।লেখাটি শেয়ার করার জন্য উম্মুক্ত।)

#আসুনমায়াছড়াই