করোনায় অনেস্টের অন্য রকম ঋণ – bangi news

করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোচিং থেকে টিউশন—সেখানেও চলছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। অনেক পরিবার গৃহশিক্ষককে মার্চ মাসের সম্মানী বুঝিয়ে দিলেও অনেকেই দেয়নি। এর ফলে যাঁরা টিউশনির ওপর ভিত্তি করে জীবন ধারণ করেন, তাঁরা পড়েছেন বিপত্তিতে। সেই সব মানুষের জন্য অন্য রকম উদ্যোগ নিয়েছে দাতব্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘অনেস্ট’। তাদের বিনা শর্তে ১ হাজার টাকা করে ঋণ দিচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এখনই এই ঋণ শোধ করতে হবে না। যখন হাতে টাকা আসবে তখন দিলেই হবে। এই পুরো কার্যক্রমটি চলছে বিশ্বাসের ওপর দাঁড় করে।

ভিন্নধর্মী দাতব্য প্রতিষ্ঠান অনেস্টের যাত্রা শুরু ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই। এখানে প্রায় সব পণ্য বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে তো মেলেই, এর সঙ্গে আবার পণ্যের লাভের ৬০ শতাংশও পেয়ে যান ক্রেতারা। সব শেষে প্রতিষ্ঠানটিতে যে লভ্যাংশ থাকে, তা-ও কারও পকেটে যায় না। পুরোটাই ব্যয় হয় মানবসেবায়।

অসাধারণ এই প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম কর বিভাগের কমিশনার ও লেখক সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ। যিনি বাদল সৈয়দ নামেই পরিচিত। আরও কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীসহ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে তিনি এই অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি চালু করেন।

গত সোমবার দুপুরে বাদল সৈয়দ অনেস্টের ফেসবুক পেজে ‘শিক্ষা গুরুর ঋণ’ শীর্ষক এ উদ্যোগের কথা জানান। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগ্রহী অনেকেই অনেস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ নিচ্ছেন।

অনেস্টের কর্মীদের একজন মনিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুই দিনে ১৭ জন ঋণ নিয়েছেন। মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে তাঁদের কাছে এই ঋণের টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের কাছ থেকে কোনো কিছু নেওয়া হচ্ছে না। হাতে টাকা আসার পর পুনরায় বিকাশের মাধ্যমে ফিরিয়ে দিয়ে নামটা বলে দিলেই হবে।

অনেস্ট থেকে ঋণ নিয়েছেন এমন এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার দিন টিউশনিও বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক। তবে সম্মানী এখনো দেননি। কখন পাব তা-ও নিশ্চিত নয়। কিন্তু বাসাভাড়া ও খাওয়াদাওয়ার জন্য আমার টাকা খুব প্রয়োজন ছিল। তাই ঋণ নিয়েছি। অনেস্টের এমন উদ্যোগে সত্যিই অনেক উপকৃত হলাম।’

এমন উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রতিষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা বাদল সৈয়দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিজেও একটা সময় টিউশনি করতাম। বেতনের টাকা দিয়ে বই কিনতাম। প্রয়োজন মেটাতাম। কিন্তু আমার চেয়ে অনেক বেশি দরকারি কাজে অনেক গৃহশিক্ষক তাঁদের সম্মানী খরচ করেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তাঁরা হয়তো মার্চ মাসের বেতন পাননি। তাই জরুরি কাজ যেন তাঁরা সারতে পারেন, সে জন্য এই ছোট্ট উদ্যোগ নিয়েছি।’

এই উদ্যোগের পাশাপাশি বাদল সৈয়দ অনেস্টের আরও দুটি উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একই সঙ্গে অনেস্টে ‘দায়মোচন’ ও ‘মমতা’ নামের দুটি কার্যক্রম চালু রয়েছে। দায়মোচন কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র মানুষকে বিনা মূল্যে খাদ্যপণ্য দেওয়া হচ্ছে। আর করোনাভাইরাসের কারণে যাঁরা এখনো বেতন পাননি, তাঁদের বিনা শর্তে বাকিতে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য তাঁদের কাছ থেকে কোনো জামানতও নেওয়া হচ্ছে না।